Saturday, July 3, 2010

বহুদিনপরলিপি: পোমো নিরীক্ষা, ন্যানোগল্প আর শব্দচাষ

১.
কলম কি-বোর্ড জাপটে বসে থাকি চুপচাপ। যদি লেখা বেরোয়। অ্যাদ্দিন যা লিখেছি, তা নাকি ফেসবুক স্ট্যাটাস। না লিখতে লিখতে, আরবিতে যাকে বলে, আল-কাতিব কুতালাহ। সাবটাইটেল করলে, রাইটার্স ব্লক। খাঁটি বাংলায়, দোহাই।

এসো তবে ব্লক কাটাই।

ব্যস্ততম দিনশেষে ক্লান্তির কথা বলা একঘেয়ে। একঘেয়েমির কথা বলাও ক্লান্তিকর। ঢং শেষে সঙের কান্না কে দেখতে চায়?

ফলে ৭২০ ডিগ্রি পাক খেয়ে আমাদের ক্লান্ত সিনেমা ঘুমিয়ে পড়ে ক্যানের ভেতর, সেলুলয়েড ফিতার কুণ্ডলি পাকিয়ে। সিনে ফেস্টিভ্যাল থেকে সাড়া নেই। মরণোত্তর জীবনে যদি ডাক টাক পাই। তাই ঐশ্বরিয়া রাই কুড়ায়, আর আমি বেল।

ছাদে ছাদে বাঁধা আর্জেটিনা জার্মানি ব্রাজিল ইংল্যান্ড। কোরবানির গরুর মতো। বাতাস এলে  উত্তেজনায় উড়তে হয় তাদের। দৃশ্যত। একে বলে প্রফেশনালিজম।

আর মানুষ নিকটে গেলে প্রকৃত ব্যাঙ ডুব দেয়। এর নাম অভিজ্ঞতা।



২.
ঘরজুড়ে অনেক ভেড়া। সম্ভবত আপনি একটা সস্তা ন্যানোগল্পে ঢুকে পড়েছেন। ভেড়াগুলো ডিগবাজি খাচ্ছিল। শেষে লজ্জার মাথা খেয়ে নেতা ভেড়াটা বললো, চটপট গুনে ফেলুন তো আমাদের। আমি তখন ঘুমে। সবাই চিৎকার : কী হলো, অনেক তাড়া আমাদের, জলদিইইই। ঘুম গাঢ় হয় আমার।

আগের গল্প থেকে বেরিয়ে গেলেন।

আরেকটায় লগইন করুন : নিজ কবিতা ছাপতে হলো জীবনানন্দ দাশ নামে। ব্র্যান্ডের কী জাদু, মাথা নাড়ে সে। বাংলাবাজার জনজটে হারিয়ে যায়, স্বনামেই।

তিন : চুল ছিড়ে খাবারে ঢুকাই। তর্ক জুড়ি ওয়েটারের সঙ্গে, এটা কী? নতুন প্লেট আনতে বলে ম্যানেজার। মুচকি হেসে মাথার উপর ক্লোজড-সার্কিট ক্যামেরাটা দেখায়।

চার : আই লাভ ইউ জান। বলেই মেয়েটা কাঁদতে থাকে। কোলে কুকরছানাটা। নিথর।

পাঁচ : মন্তব্যের প্রতীক্ষায় ক্লান্ত ব্লগার ভাবে, ছেড়েই দেবে লেখালেখি। সেদিনই প্রথম মন্তব্য আসে। ভীষণ খুশি হয় সে। হোক না স্প্যাম।

ছয় : মেয়েটা ব্যস্ত হয় কৃষিকাজে; ফেসবুকে। ছেলেটা এটা-সেটা ব্রাউজ। তারপর টুপ করে অফলাইন। মেয়েটা টের পায় না।

৩.
নাহ, ঠিক জমছে না গাঁথুনি।
আরও অপ্রত্যাশিত মোচড় প্রত্যাশিত।

মোচড় ঢোকালে ন্যানোগল্প হয় মানুষ। মেধাবীরা টেমপ্লেট। নিজের পেটের ন্যানো তো, তাই আদর করে ডাকি : অ্যান্টিগল্প। মেটাফিকশন। গিমিকাব্য। শব্দনিরীক্ষা।
  • গুগলক্ষী ল্যাপটপ্পা জোরেহেইয়ো
  • সনিভাইয়ো ফেইসবইক্কা সিনেমাম্মা গানগাইয়া মুম্বাইয়া জাদুঝাপ্পি শিরোপাপ্পি
  • ফাংকি ডিজুস ভাষা।
  • কয়েক জনম আগেই আমরা ব্যাকটি বর্গাচাষা।
  • শিরোনামহীন ল্যাজে পাড়া। বন্ধু নাই মুখোশ ছাড়া।
    আজ যে বন্ধু কাল সে মুখোশ। মুখোশ, সেও বন্ধুহীন।
এই যে মুখোশবান্ধব বাস্তবতা, অন্ধ হয়ে স্ব-অর্থ মোহে ছোটা, এর সবকিছু কি স্ব-ইচ্ছায় না? দর্শনের গোল!

তাই ওয়াইন বোতলে ভরে মিনারেল খাই। ওয়াইন, পেলে খাই। ম্যারাডোনা খাই। মেসি কাকা ওয়াকা-ওয়াকা ইউটিউব ফেসবুক বেয়ে যা যা আসে, তার সবই খাই। অন্যকেও খাওয়াই।

পর্নভরা পেনড্রাইভ। শেয়ারমাজারে শিন্নি। ফোনসঙ্গমে গর্ভবান।
জলন্ত জলবায়ু। জুম্মাবার হাতমারা। অপেক্ষারত গডো।
অ্যাকুস্টিক হৃদয়। বৈতালিক আসর। তাত্ত্বিক কুমির।
আততায়ী তেলাপোকা। চলন্ত সিলিংপাখাগামী।
লালসবুজ অন্তর্বাস। অ্যাজাক্স জাতীয়তাবাদ।
বাঙালপনায় বলক। দেশপ্রেম ২.০ বেটা।
যন্ত্রবাহিত যৌনরোগ। রাতভর দিনযাপন।
বগল-ভরা আঁধার। বৈদ্যুতিন অবতার।
নিউ মিডিয়া = গুগল = ব্যক্তিগত ঈশ্বর।

সমীকরণ-শব্দসঙ্গমের ঘোর কাটলে ঢপ  লাগে।
নিয়ম করে ভুলে যাই। নতুন দৃশ্যকল্পে মাতি।
টুইটারে খই ফোটাই।

অসংলগ্নতায় মগ্ন। বক্তব্যহীন জীবন। আসলে ফাঁদ।

৪.
মোট কথা, মনের মোষ তাড়িয়ে যতটুকু এপলিটিকাল হওয়া যায়, যাবতীয় অ্যাক্টিভিজম থেকে যত দ্রুত বিচ্ছিন্ন হওয়া যায়। বাকি থাকলো, নিজের মতো করে কিছু ওপেনসোর্স রবীন্দ্রসংগীত লিখে ফেলা। তবে সাম্প্রতিক বিষয় নিয়ে লেখার আগে ক্রসচেক করে নিন।

যেমন, এক ঝরোঝরোমুখরবাদলদিনে রবিঠাকুরকে এসএমএস করি। মামা, আপনি ফেসবুক নিয়ে গান লিখেছেন কোনো? রিপ্লাই পাই: বেতাসির, খাড়া, ছায়ানটে তোর এন্ট্রি নট।

কত আশা রে, এ আষাঢ়ে।
বিপুল তরঙ্গরে
ওরে ওরে।
_________________________________
- ইশতিয়াক জিকো / ঢাকা কলকাতা মুম্বাই
খসড়া ৫.০ / ১ জানুয়ারি - ৩ জুলাই ২০১০

Monday, August 10, 2009

কবিতা : প্রকৃত সারস মোহে

নগরের বেষ্টন কৃত্রিম
জানি তবু মায়াজাল
বুনে থাকি নগরেই

প্রকৃত সারস মোহে
ঢাকা ছেড়ে রাতভর
বর্ষায় টেকনাফ যমুনা

যাপিত প্রকৃত প্রেম
কাছে এলে কামাতুর
কৃত্রিম খাদমেশা আলেয়া

সব ফেলে স্মৃতিসহ
ডুবে যাই প্রকৃতই
মানুষের কৃত্রিম বেষ্টনে

সব ফেলে
__________________________________
খসড়া ৪.০ / ইশতিয়াক জিকো / ১০ আগস্ট ২০০৯ / ঢাকা

Saturday, August 8, 2009

দিনলিপি : অনুতাপ

মাথা বিগড়ে গেলে
এসএমএস পাঠাই
যাচ্ছেতাই

মর্ত্যে ক্ষমা মেলে না

অনুতাপে অস্থিরতায়
যাপিত জীবন

সে কি কেবলই
যা ত না ম য়?
__________________________
- ইশতিয়াক জিকো / ৮ আগস্ট ২০০৯, ঢাকা

Wednesday, June 10, 2009

শোকলিপি : টুশকির জন্য ভালোবাসা

নিতান্ত তুচ্ছ আর ব্যক্তিগত খবর। টুশকি গতকাল নিষ্ঠুর পৃথিবী থেকে চিরমুক্তি পেয়েছে। আমার সবচেয়ে আদরের সঙ্গী।

ছাদে টয়লেট সেরে প্রতি ভোরে সে ঘরে ফেরে। গতকাল ফেরেনি। কেউ নির্মমভাবে পিটিয়ে ফেলে রেখে গেছে তার নিষ্প্রাণ দেহ। বাসার সামনে।

খবরটা প্রথম দেয় উপরতলার ছোট্ট বন্ধু অরুণ।

টুশকি, আমার কাছে, আর দশটা বিড়াল নয়। আমাদের এ অনন্য সম্পর্ক দীর্ঘ সময়ে বোনা; অনেক গভীরে। প্রিয় মানুষকেও যা বলতে পারিনি, টুশকিকে তা বলেছি। মানুষের সাথে সম্পর্কের নানা পরতে আমার ব্যর্থতাবোধ আর গোপন অপরাধবোধের কথা -- সব সে মন দিয়ে শুনত। অব্যক্ত যোগাযোগে কত ভাববিনিময় হতো আমাদের। এভাবে অজান্তে সে আমাকে পোষ মানিয়ে নিয়েছে।

টুশকির নিথর দেহটা মনে করলেই থেকে থেকে কান্না আসছে। আর দুই মাস পর তার পাঁচ বছর হতো। মানুষের ক্যালেন্ডারে হিসেব করলে, ৩৬ বছর।

শোক কাটাতে সাময়িক যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতা, নিঃসঙ্গতা বেছে নিয়েছি।

প্রিয়জনের স্মৃতি নাকি ভোলা যায় না। কিন্তু আমি ভোগী মানুষ; ব্যস্ততায় মোহে ঠিক ভুলে যাবো প্রিয় টুশকিকে। শুধু একবার ডুব দিতে চাই গ্রিক পুরাণের সেই বিস্মরণের নদীতে। একবার।

টুশকি, মানুষকে তুমি ক্ষমা কোরো।

- ইশতিয়াক জিকো / ১০ জুন ২০০৯, ঢাকা
_______________________________
প্রাসঙ্গিক ফুটনোট

Saturday, February 14, 2009

কবিতা : রান আউট

আছড়ে পড়ছে যাবতীয় বেবি লাইট দেয়ালে শৈল্পিক
টিকটিকির ওপর যিনি হাজার বছর ধরে হাঁটিতেছে
আলোছায়া করিডোরে আর সোলার পাঞ্জা এইচএমআই
মেতেছে যুক্তিতক্কে পরের দৃশ্য নিয়ে নিশ্চল তেপায়ায়
বুড়ো ক্যামেরা উপভোগ করে ম্যাগাজিন রান আউট
_____________________________
- ইশতিয়াক জিকো / ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯, ঢাকা

Friday, January 16, 2009

শুক্রবারের সন্ধ্যালিপি : বিড়াল, অতুল, বাবা, প্রেস্তো

শুনতে পাচ্ছি আমার মা আপন মনে বকবক করে যাচ্ছে জন্মনিয়ন্ত্রণজ্ঞানশূন্য সাড়ে চার বছর বয়সী বিড়ালের সাথে যে সম্প্রতি তিনটি বাচ্চা জন্ম দিয়েও সান্ধ্যকালীন বিস্কিট খাওয়ার লোভে নির্বিকার ভঙ্গিতে ম্যাও ম্যাও কর তার পায়ের কাছে।

ম্যাও ম্যাও ছাপিয়ে হেডফোনে শুনতে পাচ্ছি, আজ আমার শূন্য ঘরে আসিল সুন্দর, ওগো অনেক দিন পর; বহুবার শোনা অতুলপ্রসাদ সেনের গান। এ গান তাঁর মামাতো বোন হেমকুসুমকে লেখা, যাকে বিয়ে করেছিলেন, যদিও থাকতেন আলাদা বাড়িতে, একই শহরে; দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েনে কালেভদ্রে একসাথে থাকার সময় হয়তো লেখা এ গান। ইত্যাদি।

দেখতে পাচ্ছি, অন্যমনস্ক বাবা আমার, যার সাথে আমার কথা হয় না দীর্ঘদিন, বাথরুম থেকে বেরুবার সময় যথারীতি বাতি নেভায়নি, হয়তো এখন টিভি অন করে ভলিউম বাড়িয়ে সোফায় শুয়ে কোনো বই পড়তে পড়তে তন্দ্রাচ্ছন্ন হবে।

রুশ বান্ধবী লিলিয়ার অনুরোধে টরেন্ট দিয়ে ঢিমেতালে ডাউনলোড হচ্ছে দ্য রিটার্ন সিনেমা। তার প্রিয় এই সিনেমা ভেনিস উৎসবে শ্রেষ্ঠ ছবির পুরস্কার পায় ২০০৩-এ। লিলিয়া আচ্ছন্ন সোভিয়েত সময় নিয়ে, এখনকার রাশিয়ার কিছুই ভালো লাগে না তার; না সিনেমা, না বোলোগনা পদ্ধতির পড়াশোনা। তার ভালো লাগে দস্তয়ভস্কি, সার্ত্রে, কামুর লেখা যদিও তার ডিপ্লোমার বিষয় ব্যাংক ঋণের ধরন-প্রকরণ। ইদানীং বেশি শুনছে হাবিব ওয়াহিদের বাংলা গান "ভালো বাসবো বাসবো রে বন্ধু"।

আর আমার পছন্দ রাশিয়ার ত্রেপাক নাচের সাথে বাজানো প্রেস্তো লয়ের অর্কেস্ট্রা সঙ্গীত। যেমন পছন্দ আমার সবচেয়ে প্রিয় সাড়ে চার বছর বয়সী বিড়ালটি, যে নিষ্ঠার সাথে উদাসীন ভঙ্গিতে ম্যাও ম্যাও করে যাচ্ছে দুটি টিপ বিস্কিট খেয়েও।

_________________________________________
- ইশতিয়াক জিকো / ১৬ জানুয়ারি ২০০৯, ঢাকা

Monday, January 12, 2009

চিরকুট: কেমন আছো?

কেমন আছো তোমরা, আপনারা?

চলে আসছে জানুয়ারি ১৯। আবারও শুটিং শুরু। ব্যস্ততায় ডুবে যাওয়া আবার। শুটিং বিরতিতে ঢাকায় ভালো সময় কাটলো।

স্মৃতিকাতর পৌষ শেষে মনে পড়ছে তোমাদের। আমার হারিয়ে ফেলা সহকর্মীদের, প্রাক্তন প্রেমিকাদের, আগাম বন্ধুদের। যেন ইচ্ছা করেই হারিয়ে ফেলেছি তোমাদের, আপনাদের।

বিপ্লবী ঝাঁঝালো কথা আর কাজ করে না মাথায়।

আর এও সত্যি, যূথচারিতায় উদাসীন আমার মন। দৃশ্যমান স্বার্থের বাইরে কোনো সম্পর্ক টিকিয়ে রাখিনি। তবু দৃশ্যাবলী ছাপিয়ে মনে পড়ছে তোমাদের।

নিশ্চয়ই সবাই ভালো আছো, ছিলে, থাকবে। নয়তো "ভালো থাকা"র সংজ্ঞা পাল্টে নিয়ো। তবু ভালো থেকো।

- ইশতিয়াক জিকো / ১২ জানুয়ারি ২০০৯, ঢাকা
________________________________
নোট: কেমন আছো শিরোনামে একটা গান আছে। সাবিনার কণ্ঠে। কবীর সুমনের কথা আর সুরে। অডিওভিডিও

Friday, January 2, 2009

২০০৯ : ভবিষ্যতের স্মৃতি

_____টিকে থাকবে কাগুজে ডায়েরি
_______তেলাপোকার মতো;
২০৪৬ এর ফেলে আসা_____
কল্পকাহিনী শোনাতে _____
_________শোনাতে____
বুড়িয়ে যাবেন ওং কার ওয়াই___
___বছর শেষের কবিতা ফেসবুকে আপলোড
করবেন সুব্রত গোমেজ, ল্যাপটপে আশিক
_____মোস্তফা; দ্বিমাত্রিক খাঁচায় ধরা দেবে
সুশীল কম্পোজিশন, শহুরে প্যাঁচার____
আস্ফালনে মনিটরে ভোর হবে______
______রিকশাবিহারে হাজারো ইচ্ছার
___অবদমন হবে ৫ সিসি বীর্যপাতে
_________________________________
- ইশতিয়াক জিকো / ১~২ জানুয়ারি ২০০৯, ঢাকা

Wednesday, December 10, 2008

কবিতা: ট্রোজানের ঘোড়াগুলি

শুটিং শেষে ঢাকায় ফিরেই
স্মৃতিজুড়ে আক্রমণ
ট্রোজান ঘোড়ার

ট্রোজানের ঘোড়াগুলি থেকে
জন্ম নেয় এক দলা কালিয়াকৈর
এবং স্মৃতিতে টাকিলা

হায় স্মৃতি, পেনড্রাইভ, হায়
আবারও ফরম্যাটের শিকার

- ইশতিয়াক জিকো / ১০ ডিসেম্বর ২০০৮, ঢাকা
___________________________
নোট: গাজীপুর কালিয়াকৈরে দুই কিস্তিতে শুটিং হলো 'মেহেরজান ১৯৭১' সিনেমার। শুটিং আরও বাকি। কত টুকরো স্মৃতি

Friday, September 26, 2008

নেট ভ্রমণ : গুগল, ফেসবুক, আমাদের প্রাইভেসি

এক.
গুগল, আগামী দিনের জ্যোতিষী?
আপনি যা খুঁজছেন, গুগল কি তার উত্তর দিতে পারছে? ধরা যাক, শতাব্দীর সেরা সিনেমা কোনটি তার চেয়ে বরং জানতে চাইছেন : কোন সিনেমাটি আপনার কাছে সেরা হবে। কী সেই সিনেমাটির নাম, গুগল কি বলতে পারবে? তা'লে কিসের ঘোড়ার ডিমের সার্চ ইঞ্জিন।

সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায়েরটি লেখা থেকে জানতে পারলাম, গুগল নাকি এবার মানুষের যাবতীয় প্রবণতাকে রেকর্ড করে ফেলবে। আপনি-আমি কোন কোন শব্দ দিয়ে খুঁজছি, গুগল তা নজরদারি করছে। জমা রাখছে বেনামে। এসব বিপুল পরিমাণ বেনামী তথ্য বিশ্লেষণ করে মানুষের চাহিদার প্যাটার্ন বের করা হবে, হচ্ছে। আর সে প্যাটার্ন বুঝে বাজারে আনা হচ্ছে নিত্য নতুন পণ্য, বিনিয়োগের নতুন নতুন প্যাকেজ। জাইটগাইস্ট ২০০৭ নমুনা দেখা যেতে পারে।

এবার ভয়ঙ্কর দিকটা অনুমান করি। ভোগ-সংস্কৃতির খপ্পরে ভবিষ্যতের কোনো চেহারা ভেসে ওঠে মনে।

গুগল তাদের গবেষণালব্ধ মডেল/প‌্যাটার্ন বিক্রি করবে (নাকি করছে?) মার্কেট রিসার্চ প্রতিষ্ঠানের কাছে। সেখান থেকে যাবে বহুজাতিক কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের আরএনডি কাছে। তারা এমন সব পণ্য আমার কাছে আনবে, যা মনে হবে শুধু আমার জন্যই।

পকেট ফাঁকা থাকলেও সমস্যা নেই। আমি ব্যাংক ঋণ নিয়ে সে পণ্য কিনতে ছুটবো। অসংখ্য আমি প্রতিযোগিতা দিয়ে ছুটবে আমার সাথে কেনার জন্য। সব পরিচয় ভুলে আমরা সবাই ভোক্তা হবো। একমাত্র গুগলই যে আমাদের চাহিদা বোঝে, আমাদের মন বোঝে!

গুগল প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ঈশ্বর হবেন।

দুই.
ফেসবুকেই জমে থাকে তারা
ফেসবুকে কত কী জমা করছেন। ছবি, ভিডিও, ব্যক্তিগত তথ্য, মন্তব্য। কিছুদিন পর চাইলেন, একটু ব্যাকআপ রাখা যাক তথ্যগুলোর। বন্ধুদের কনটাক্ট অ্যাড্রেস কিংবা ইনবক্সের মেসেজগুলো। কিন্তু না, খেয়াল করে দেখুন, অটোমেটিক এক্সপোর্ট বা ডাউনলোড করার কোনো অপশন রাখেনি ফেসবুক।

কিছু থার্ড পার্টি অ্যাপ্লিকেশন পেলাম যেগুলো দাবি করছে, ফেসবুকে আমার বন্ধুদের প্রোফাইল থেকে তথ্য জড়ো করে আমাকে ইমেইলে পাঠিয়ে দিবে। কিন্তু বেশিরভাগ সময়ই তারা পাঠায় না, পাঠানোর ভান করে; শেষে ব্যক্তিগত তথ্য নিয়ে ছাপিয়ে দেয় অন্য কোথাও

আর এ ধরনের অ্যাপ্লিকেশন ব্যবহার করলে ফেসবুক ব্যবহারবিধি লঙ্ঘনের দায়ে আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যেতে পারে। যেমনটি হয়েছিল রবার্ট স্কোবলের

সেখান থেকে জানতে পারি, ডেটাপোর্টেবিলিটি প্রকল্প নিয়ে। ইন্টারনেটে সাইটগুলোয় আপনি যেসব তথ্য জমা রাখছেন, তার নিয়ন্ত্রণ যেন আপনার হাতেই থাকে, সেটি প্রতিষ্ঠা করতেই এর শুরু। বিস্তারিত

সম্প্রতি গুগল, ফেসবুকও যোগ দিয়েছে এ গ্রুপে। দেখা যাক।
_________________________
- ইশতিয়াক জিকো / ২৬ আগস্ট ২০০৮ / ঢাকা