Friday, August 29, 2008

পোমো গাইড

১.
ব্লগে কিংবা আজিজে বসে বন্ধুদের আড্ডা ধরতে পারছেন না? উত্তরআধুনিকতা, বিনির্মাণবাদ, ফুকো-দেরিদা-লাকা-বার্থ ইত্যাদি বিজাতীয় শব্দমালা জানেন না বলে আপনি নিয়মিত মফিজ হচ্ছেন?

জেনে নিন গোপন রহস্য। কোনো কিছু না জেনেই কীভাবে কথা আর লেখায় উত্তর-আধুনিকতা প্রসঙ্গ টেনে আনবেন, তার তরিকা

২.
লিটলম্যাগের জন্য একগাদা রেফারেন্সসহ জ্ঞানগর্ভ নিবন্ধ লিখতে চান? এসে গেছে পোস্টমডার্নিজম জেনারেটর। বাটন টিপুন, লিটলম্যাগ বা জার্নাল উপযোগী লেখা উৎপাদন করুন।

৩.
এগিয়ে যাচ্ছে দুনিয়া। আপনার (বা আপনার পাশের বাড়ির) বাচ্চা কি তাল মেলাতে পারছে? বাচ্চাদের জন্য এসেছে উত্তর-আধুনিকতার সহজ পাঠ

৪.
প্রাসঙ্গিক বই ডাউনলোড : পোস্টমডার্নিজম ফর বিগিনার্স
জেমস পাওয়েল-এর। ১৬৩ পৃষ্ঠা। ১৯ মেগাবাইট।
পাসওয়ার্ড : bulldog

______________________
- ইশতিয়াক জিকো / আপডেট : ২৯ আগস্ট ২০০৮ / ঢাকা

চিঠি : মুকুটটা তো পড়ে আছে, রাজাই শুধু নেই

কতটুকু লিখলে এই চিরকুট চিঠি হবে?

এখন আমার বেলি ফুলের সুবাস লাগবে। কোথায় পাবো? নেট থেকে ফুলের সুবাস ডাউনলোড করা যায়?

আমার একটা বিড়াল আছে, টুশকি নাম, সংসার পেতেছে ঘরেই, বাক্সের ভেতর। একমাত্র বিড়ালই পারে বাক্সকে পৃথিবী ভাবতে। বিড়াল ভালো লাগে তোমার?

তোমাকে আজ তুমি বললাম। আগামীকালও বলবো। এর বেশি নামবো না। বাইরে কেমন মেঘলা আকাশ। বৃষ্টি নামবে। বৃষ্টি আমার ভালো লাগে, লাগতে লাগতে একসময় বিরক্তি ধরে। সব বিরক্তির শুরুই এইসব ভালো লাগা থেকে।

ভালো লাগলে বাজে বকি খুব। খারাপ লাগলেও। বকলে আবার ভালো লাগে। ভালোলাগা খারাপলাগার হিসেব করেই আমার সময় কাটে। সবারই কাটে।

হেসো না। আমার দমবন্ধ লাগছে। একটু পর ঠিক হয়ে যাবো।

অনুভূতিরা এমন। ওঠে। আবার নামে। সাইন কার্ভ। এত অসংলগ্নতা থাকলে মানুষ মারা যায়। মানুষ মারা গেলে সবাই যদি বেলি ফুল হতো।

(গার্গীকে লেখা ব্যক্তিগত চিঠি। পরিবর্তিত। গার্গী আমার অচেনা বান্ধবী। আর চিঠির শিরোনাম মান্না দের 'আমার ভালোবাসার রাজপ্রাসাদে' থেকে নেয়া।)

______________________
- ইশতিয়াক জিকো / ২৯ আগস্ট ২০০৮, ঢাকা

Friday, August 22, 2008

কবিতা : কেউ কেউ হারিয়ে যায়

আয়নায় তাকালে
সাগরের ঘ্রাণ পাই
থাকি শহরতলীতে
তিন তলায়

অনেক এসএমএস
উত্তরহীন
কথা রাখেনি কেউ

রাখে না
আমার মতো

__________________
- ইশতিয়াক জিকো / ২২ আগস্ট ২০০৮ / ঢাকা

Friday, August 1, 2008

সম্পাদিত: কথার সিনেমা

ফুটেজ
শট ১: কম্পোজিশনে সমকালীনতা
শট ২: ফেইসবুকে বাড়ে বন্ধু সংখ্যা
শট ৩: ধাতব আওয়াজে ছাপা হয় ব্যথা
শট ৪: ব্যথা কমে গেলে এডিট করুন


প্রথম কাট
ফেইসবুকে ছাপা ধাতব বন্ধু ব্যথা
সমকালীনতা কম্পোজিশনে এডিট
কমে গেলে ব্যথা আওয়াজে সংখ্যা বাড়ে


দ্বিতীয় কাট
ফেইসবুকে ব্যথা সমকালীনতা
কম্পোজিশনে কমে গেলে ছাপা
বন্ধু আওয়াজে ধাতব সংখ্যা বাড়ে


তৃতীয় কাট
ধাতব আওয়াজে সমকালীনতা
ফেইসবুকে কমে বন্ধু সংখ্যা
কম্পোজিশনে ছাপা ব্যথা বাড়ে
___________________________
চিত্রনাট্য, শব্দগ্রহণ, সম্পাদনা : ইশতিয়াক জিকো
চিত্রগ্রহণ : পাঠক
বিশেষ কৃতজ্ঞতা : ঢাকা বিদ্যুৎ বিতরণ কর্তৃপক্ষ

একটি '১ জুন ২০০৮' পরিবেশনা

গল্প : ফোনসঙ্গমের সম্ভাব্য জটিলতা

শাওন মাসের তেরো তারিখ রাত দেড়টায় ফোনসঙ্গম শেষে মুনতাহা মুরশেদের নকিয়া এন৯৫ মোবাইল থেকে একটি ফুটফুটে বাচ্চা বের হয়। প্রযুক্তির এই উদ্ভট রসিকতায় বা উৎকর্ষতায় মুগ্ধ না হয়ে মুনতাহা মুরশেদ উল্টো ভয় পায় যেহেতু তার পিরিয়ড চলছিল। মুনতাহার ভয় পাওয়ার আরও কারণ থাকতে পারে যা তার ঘুমন্ত স্বামীর জানার কথা নয়। অফিসফেরত ক্লান্ত স্বামী সুলতান মুরশেদ ঘুমিয়ে গেলেই মুনতাহা এমন সম্পর্কের ডানা মেলে নকিয়া এন৯৫ ফোনে। এবং দিনতারিখ ভুল না করলে মুনতাহার মনে পড়ে ঠিক এক বছর আগের কথা যেদিন স্টার প্লাসে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় এই ফোনের বিজ্ঞাপনটি প্রথম দেখানো হয়। বিজ্ঞাপনটি দেখার পর মুনতাহার স্বামী নিজ উদ্যোগেই মালয়শিয়া থেকে এই ফোন তার জন্য কিনে আনে। কিনে আনার কারণ না জানলেও ক্ষতি নেই যেহেতু নির্বীর্য স্বামীদের চাপা কষ্ট অথবা তাদের মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ এ গল্পের আধেয় নয়। বরং এটা জানা গুরুত্বপূর্ণ যে শাওন মাসের তেরো তারিখ রাত দেড়টায় মুনতাহার কল লিস্টের শেষ নামটি আমার হবার পরও ফুটফুটে বাচ্চাটির ভার্চুয়াল বাবা হতে আমি অস্বীকার জানাই। এর কারণ হয়তো পুরান ঢাকার নিম্ন আদালতের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ যেখানে দিনের পর দিন হাজিরা দিয়ে আমি ক্লান্তি বোধ করি এবং এই বোধ আমাকে আরও অনেক কিছু অস্বীকার করাতে বাধ্য করে। আদালতে দাঁড়িয়ে আমি শুধু তাকিয়ে থাকি সামনে বসা ছেলেটির দিকে যে শাওন মাসের তেরো তারিখ কোনো এক নকিয়া এন৯৫ থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্ন বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে আমাকে।

পুনশ্চ: নকিয়া কথা দিয়েছে, ছেলেটির লেখাপড়া এবং আমার চলমান মামলার যাবতীয় খরচ চালিয়ে যাবে আজীবন।

____________________________
- ইশতিয়াক জিকো / ১ আগস্ট ২০০৮ / ঢাকা

Sunday, June 29, 2008

গল্প : দল বেঁধে যেভাবে হত্যা করি

একদিন বলাকায় দল বেঁধে সিনেমা দেখতে গিয়ে রিয়াদ, আমাদের মাঝে যে কনিষ্ঠ, ভালোবেসে ফেলে সিনেমাকে। এবং বিরতির সময়ে রিয়াদ, যার কণ্ঠস্বর শুনতে আমাদের সবাইকে কথা বন্ধ করতে হয়, জানায় যে সে সিনেমাকে স্পর্শ করতে চায়। যাকে ভালোবাসা যায়, তাকে স্পর্শ করার এ অধিকার জন্মানো স্বাভাবিক ভেবে আমরা রিয়াদের চাওয়াকে তখনই ফেলতে পারিনি।

এবং এও সত্যি হতে পারে যে ততদিনে আমাদের সবার শিমুল মুস্তাফার কণ্ঠে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অমলকান্তি শোনা হয়ে গিয়েছে, এবং শুনে শুনে আমরা মনে এই ধারণার জন্ম দিয়েছি যে বন্ধুদের এমন অনেক চাওয়াই স্বাভাবিক, যেমন অমলকান্তির রোদ্দুর হতে চাওয়া, এবং তা নিয়ে হাসাহাসি না করে আমাদের উচিত বন্ধুর চাওয়াকে আরো বোঝা। তবে আমাদের ভয় হয় যে অমলকান্তির পরিণতি রিয়াদের, যে অত্যন্ত লাজুক কণ্ঠে আমাদের জানিয়েছিল সিনেমাকে স্পর্শ করার কথা, জানা ছিল কিনা।

আমাদের এমন অনেক ইচ্ছা উদয় হয় এবং মিলিয়ে যায়, আমরা তা গোপন করে রাখি, কিন্তু রিয়াদ ইচ্ছা গোপন করতে পারেনি বলে আমাদের রাগ হতে থাকে। তবে অমলকান্তি কবিতা পড়া থাকায় আমরা সে রাগ গোপন করে রিয়াদকে সিনেমা স্পর্শ করার ব্যাপারে সাহায্য করবো বলে একমত হই এবং একটি সভা ডাকি। আমাদের ভেতর মুনিয়া সিনেমা সম্পর্কে বেশি খবর রাখত বলে তাকে দায়িত্ব দিই সভা চালানোর এবং রিয়াদের চাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কী করণীয় থাকতে পারে তা ঠিক করতে।

মুনিয়া অনেক রেফারেন্স ঘেঁটে আমাদের জানায়, দেখা-শোনার পাশাপাশি সিনেমা অনুভব করা যায় মাত্র। একে ধরা বা স্পর্শ করা যায় না। প্রক্ষেপক থেকে আলো এসে পড়ে রুপালি যে পর্দায়, সে পর্দা স্পর্শ করা যায় বড়জোর, তবে মুনিয়া এও মনে করিয়ে দিতে ভোলে না যে পর্দা শুধুই পর্দা, যেমন প্রক্ষেপক শুধু প্রক্ষেপক এবং এর কোনোটিই সিনেমা নয়। মুনিয়ার ওপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস থাকায় আমরা রিয়াদের অনুপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্তে আসি যে সিনেমা পর্দা বা প্রক্ষেপক নয় এবং যা অনুভব করা যায়, তা স্পর্শ করা যায় না।

এই সিদ্ধান্ত স্থির রেখে আমরা ক্রমাগত সভা করে যাই এবং নতুন কোনো কবিতার এমপিথ্রি পেলে পেনড্রাইভে ঢুকিয়ে বাড়ি ফিরি।
_____________________________
- ইশতিয়াক জিকো / ২৯ জুন ২০০৮, ঢাকা

Friday, June 20, 2008

শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ গল্প (উৎসর্গ : কবি বিনয় মজুমদার)

লা' আভেনচুরায় সান্দ্রো কেন তরুণ স্থপতির কালির দোয়াতটি উল্টে ফেলেছিল, নিচের যেকোনো একটি ডিসকোর্সের আলোকে তোমার মতামত ব্যাখ্যা করো।

উৎপল ঠোঁট কামড়ায়। মাথার লম্বা চুলে গিট্টু পাকায়। প্যান্টের জিপার খোলে। লাগায়। বারবার জিপার খুললে-লাগালে নাকি বুদ্ধি খোলে।

'মডার্নিজম অ্যান্ড ন্যারেটিভ সিনেমা ৪০৮' কোর্সের রিটেন আজ। সেমিস্টার ফাইনালে এইসব ফালতু প্রশ্ন দেয়ার কোনো মানে হয়?

গত বছর মাইকেলেঞ্জেলো আন্তনিওনির সিনেমা থেকে এক সেট প্রশ্ন এসেছিল, তাই এবার বাদ দিয়েছে। বিখাউজ স্যার ইচ্ছা করেই আবার রিপিট করেছে। পুরো ২০ নম্বর।

লা' আভেনচুরা,আন্তনিওনি, ইতালি, মডার্নিজমের গুষ্ঠি কিলিয়ে, খেতা পুরিয়ে আবার জিপার খোলায় মনোযোগ দেয় উৎপল। গলা শুকিয়ে আসছে।

মেকআপ আর্টিস্ট এসে তার কপালের ঘাম মুছে দিয়ে যায়।
__________________________
- ইশতিয়াক জিকো / ঢাকা / ২০ জুন ২০০৮

Monday, June 16, 2008

দিনলিপি : বক্তব্যহীন জীবন

'ঈশ্বরে বিশ্বাস না করো, অন্তত কিছু কুসংস্কারে বিশ্বাস করো'
- গ্যাব্রিয়েল গার্সিয়া মার্কেজ

শাহবাগ থেকে মাইলাইন বাসে উঠে উপলব্ধি করলাম, আমার নিজস্ব কোনো বক্তব্য নেই। চারপাশের সব দেখে যাচ্ছি শুনে যাচ্ছি লিখে যাচ্ছি বকে যাচ্ছি। কিন্তু আমার নিজের বলার কিছু নেই। জীবন নিয়ে গভীর কোনো দৃষ্টিভঙ্গি নেই। স্পষ্ট উচ্চারণ নেই। উপার্জনের আশায় অর্থের বিনিময়ে অনর্থ উৎপাদন করে যাচ্ছি। নির্মাণ করতে গিয়ে আপোষ করে যাচ্ছি দর্শকের তুষ্টির সাথে, প্রযোজকের অর্থের সাথে, সহকর্মীদের ভাবনার সাথে। এই আপোষের ক্ষেত্র আর মাত্রা বাড়ছে। হয়তো আরও বাড়বে। কারণ আমি গভীরভাবে উপলব্ধি করছি, আমার নিজস্ব কোনো বক্তব্য নেই। আমার খারাপ লাগছে।
__________________
- ইশতিয়াক জিকো / ১৬ জুন ২০০৮ / ঢাকা

Tuesday, June 3, 2008

দিনলিপি : ল্যান্ডফোনে উৎপাত

আপনার অ্যাকাউন্টেএএ
পর্যাপ্ত পরিমাণ টাআকা নেই
দয়া করেএএ রিচার্জ করুন

সেই সকাল থেকে মিহি কণ্ঠে এই উৎপাত। টেনে টেনে উচ্চারণ। কোনো মোবাইল ফোন না, এই আকুতি বিটিটিবি ল্যান্ডফোনের। রিসিভার তুললেই এইসব বলছে।

তারপর অবশ্য ফোন করা যায় ঠিকঠাক। কিন্তু আবার রিসিভার তুললেই -

Tuesday, May 27, 2008

সন্ধ্যালিপি : অনুপ্রাসের ঘাড়ে রোঁ

রায়হানের রাজহাঁস।
উচ্চারণ করলেন কামু
ভাই। আমার সামনে। তিনি নাটক
না সিনেমা বানাতে চান
এটা নিয়ে।

রাজহাঁস কেন?
সিগনিফাইয়ার? প্রশ্নটা প্লট
জানতে। যেহেতু গল্প পড়া নাই। আবু
কায়সারের। জানলাম। তিনিও পড়েন নাই।
শুধু শিরোনাম শুনেই
সিনেমার সিদ্ধান্ত।
শিরোনাম
ভালো
লাগার কারণ
অনুপ্রাস। রায়হান। রাজহাঁস।

তাইলে হালিমের হাঁসছানা কিংবা
কামরুজ্জামান কামুর কারখানা হলেও
হতো। রাজহাঁসের গুরুত্ব কী? আমি বলি।

সাথে ভাবি : এইসব অনুপ্রাস
উচ্চারণে উপাখ্যান উন্মোচিত হয়
কিনা আর
নিরীক্ষার নামে
একগাদা এন্টার দিলেই
কবিতার মতো মনে হয় কিনা।

_________________________
- ইশতিয়াক জিকো /২৭ মে ২০০৮, ঢাকা