মে মাসের নির্বাচিত দুঃস্বপ্ন
সকালে তাড়াহুড়ো করে বেরিয়েছি। ইউনিভার্সিটির বাস ধরবো। বড় রাস্তায় পোঁছে দেখি, চোখের সামনে দিয়ে বাসটা ছেড়ে গেছে। একটুর জন্য মিস। রিকশায় উঠলাম। বাসের গতিতে ছুটছে এ রিকশা। অথচ উল্টো দিকে।
একটু পর রিকশা আপনাআপনি ঘুরে গেল। কমলাপুর দিয়ে যাচ্ছে। রিকশাওলার দিকে নজর গেল। শার্টের পেছনে রক্ত। শার্ট না ঠিক, তালপাতা নারকেলপাতা জড়ানো গায়ে। রিকশা থামলো মতিঝিলে। নামলাম। খেয়াল করি, রিকশাওলার মুখ নেই। নারকেলের খোলস কেটে বসিয়ে দেয়া হয়েছে মুখের জায়গায়। খোদাই করা নাকমুখচোখ বসানো। ভাড়া মিটিয়ে আবার সে রিকশায় চড়লাম। রিকশা পেছন দিকে চলতে শুরু করলো এবার। বাসার সামনে মুদি দোকানটার কাছে থামলো।
বাসার নিচে ভিড়। বিভিন্ন ফ্ল্যাটের লোকজন দাঁড়িয়ে। কলাপসিবল গেটে তালা মারা। কলিংবেল বাজাচ্ছে কয়েকজন। একজন মোবাইলে কথা বলছে আঞ্চলিক ভাষায়, চিৎকার করে। শুধু পলিটিকাল ইকনমি শব্দটা কানে আসলো। বাসার নিচে টিনের বেড়া ছিল। সেটা নেই। তার বদলে চকচকে লাল রঙা দেয়াল। ময়লা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকার কথা। মসৃণ মেঝে সেখানে। এটা আমাদের বাসা তো? উপরে তাকাই। ঠিক আছে, আমাদের বাসাই। নিচের দিকটা অমন বদলে কেন কখন?
গেট বন্ধ এখনও, চাবি ফেলেনি ওপর থেকে কেউ। হঠাৎ দেখি, ভিড়ের মধ্যে আফরিনার আম্মু, স্কার্ফ জড়ানো মাথায়। পায়ের কাছে ট্রাভেল সুটকেস। কোলে আফরিনা, ফ্রক পরা, আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে। ভিড়ে কোনো মানুষ নড়ছে না। স্টিল ফটোর মতো।
বাসার দরজা খোলা ছিল। ঢুকে দেখি কেউ নেই। আফরিনাকে দেখলাম একবার। প্রেগনেন্ট। ম্যাক্সি পরে পায়চারি করছে। হঠাৎ নেই হয়ে গেল। ঘরে এসে শুয়ে পড়ি বিছানায়। ল্যান্ড ফোন বাজছে। আম্মুর চিৎকার, ফোন কেন ধরি না। ফোন ধরে দেখি, শব্দ নেই ওপ্রান্তে। টিঅ্যান্ডটির ফোনসেটে লেখা, মিসড কল, ০১৮১২ নম্বর থেকে। আরে, আম্মু চিৎকার করলো কোত্থেকে? খুঁজি, আম্মুকে, ঘরজুড়ে। নেই। বারান্দায় গিয়ে দেখি ভাইয়া। গ্রিলে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে। বাইরে ঘুটঘুটে অন্ধকার। অথচ বাসায় ঢোকার সময় দিনের আলো ছিল।
নিজ ঘরে ফিরে যাই। বিছানায় শুবো। দেখি, সেখানে আগেই শুয়ে আছে সকালের রিকশাওলা। মুখের বদলে মুখোশ। শরীরে তালপাতা জড়ানো, রক্তাক্ত। ভালো করে লক্ষ্য করি, লোকটার পেটে বিশাল গর্ত। কালো গহ্বর। ঘুম ভেঙে গেল।
- ইশতিয়াক জিকো / ৯ মে ২০০৭ / ঢাকা
__________________
নোট : সংযুক্ত ছবিটা 'পাপকর্তন' স্বল্পদৈর্ঘ্য সিনেমার শুটিংয়ের সময় তোলা। অতিরিক্ত শট ছিল, সম্পাদনায় বাদ গেছে পরে। বাদ যায়নি নারকেলমুখটা, আমার অবচেতন মন থেকে, হয়তো। আভঁগার্দ স্বপ্ন হয়েছে বেশ!
No comments:
Post a Comment