মাণিক্যচিপায় আটক স্বপ্ন বিষয়ক শেষ গিমিকাব্য
অর্থবছরের শুরুতেই ক্যাচাল বাধে৷
অর্থমন্ত্রী জানান, ভিনদেশী বিজাতীয় স্বপ্নে জর্জরিত দেশবাসী৷
তাই স্বপ্ন খাতে আমদানি শুল্ক ও ভ্যাট আরোপ করা হলো৷
দেশবাসীর মঙ্গল হবে তাতে৷
যথারীতি মধ্যবিত্তরা গাঁইগুঁই করেন৷
যথারীতি স্বপ্নমন্ত্রী উত্তরাধুনিক তাফসির শোনান৷
যুগ বদলাইছে৷ বলেন, বদলায় নাই?
এই ভ্যাটারোপের আগে আপনাদের অর্থমন্ত্রী
উনার নীতিনির্ধারক দল নিয়া তিন তিন বার
আমেরিকা (র.) দেশে রাষ্ট্রীয় সফর কইরা আসছেন৷
সফরকালে তিনারা দেখছেন,
সেইখানেও এই সিস্টাম চালু আছে৷
আর আপনেরাই বলেন, এই যুগে কেউ আমদানি কইরা স্বপ্ন দেখে?
সময় মতন স্বপ্নই তো আপনাদের দেইখা নিতেছে৷
বলেন, নিতেছে না?
আল্লার কিরা৷গুগলে সার্চ কইরা দেখেন৷
অতএব
আসেন আমরা মুক্তচিন্তা করি।
আসেন আমরা সময়ের সাথে আগামীর পথে হাঁটি৷
আনন্দে হাতে-পায়ে তালি দেন জনগণ৷
গুগল ডট কমে সার্চ করেন জনগণ৷
সত্যতা যাচাই করেন জনগণ৷
করে হাঁপ ছাড়েন৷
ছেড়ে শান্ত হন৷
এদিকে
মুখ চাপেন, চেপে হাসেন দেশী করপোরেট বণিকরা৷
দেশী স্বপ্ন এবং বিদেশী স্বপ্নযন্ত্র কিনতে
এক ঐতিহাসিক মানবিক বিজ্ঞাপন তৈরি হলো৷
নৌকায় চড়ে, পথের ক্লান্তি ভুলে, মায়ের জন্য
স্বপ্নযন্ত্র (কিনে) নিয়ে যাচ্ছেন বিজ্ঞাপন-বালক৷
স্বপ্নযন্ত্র পেয়ে বিজ্ঞাপনের মা খুশি৷
করপোরেট বণিক খুশি৷
বিজ্ঞাপন নির্মাতা খুশি৷
মিডিয়াবাহিত দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত
দর্শকবৃন্দ খুশি৷
যে যার কারণে খুশি৷
স্বপ্নকে বাণিজ্যপণ্য করে এ ধরনের স্বপ্ন ফাঁদার
ফোড়ন কাটেন ক-চ-ট-ত-প সমালোচনাজীবীরা৷
অমনি--
মিয়া ভাই, নয়া আইলেন নাকি এই লাইনে?
মিয়া ভাই, স্বপ্ন বাণিজ্যপণ্য ছিল না কুনদিন?
মিয়া ভাই, আরেক কোম্পানি থেইকা কত খাইলেন?
মিয়া ভাই, স্বপ্নদোষ হয় নাকি?
ধুর মিয়া, খালি স্বপ্নযন্ত্রটাই দেখলেন৷
ওইটা তো স্রেফ উছিলা৷
মাতৃভক্তিটা দেখেন৷
দেইখা শিখেন৷
বাহ! এমন সুযোগ আর কে পায়?
স্বপ্নযন্ত্রও কেনা হইলো৷ মাতৃভক্তিও দেখানো হইলো৷
অতঃপর
স্বপ্নলিংক্ড হন সবাই৷
সবাই মানে লিংক্ড হলেন না যারা, তারা বাদে৷
টেকনিক্যালি লিংক্ড হওয়া আর কি৷
উঠতি মধ্যবিত্তরা-- অবসরে যারা
সুশীল সমাজের সভ্য হবার স্বপ্ন দেখার চর্চা করতেন,
মাণিক্যচিপায় পড়লেন তারা৷
মিনিটপ্রতি স্বপ্নচার্জ নাগালের বাইরে৷
পিক আওয়ারে মোটেই স্বপ্ন দেখা যাচ্ছে না৷
ফাজিল শুল্ক! দুষ্টু ভ্যাট!
ক্রিকেট ভ্যাট!
রুটিমদ ফুরিয়ে যাবার আগেই প্রিপেইড স্বপ্ন ফুরিয়ে যায়৷
স্বপ্নবাস্তব কবিতা ছেড়ে লিখকরা নামলেন
অতি-বাস্তব সংলাপসমৃদ্ধ প্যাকেজ নাটক লিখায়৷
এমতাবস্থায়
দেশী বণিকদের কুমির-দয়া হলো৷
তারা হেভিচালুআইডিয়া চালু করলেন৷
তারা ১০ সেকেন্ডের পালস চালু করলেন৷
নয় সেকেন্ডব্যাপী স্বল্পদৈর্ঘ্য বাংলাস্বপ্ন জনপ্রিয়তা পেল৷
কাসুটি জিন্দেগি ছেড়ে বিকল্পধারার স্বপ্ন বন্দেগি শুরু হলো৷
মেগাসিরিয়াল স্বপ্ন, শেষ-হইয়াও-হয়-না-শেষ৷
ব্যস্ত নাগরিক, হাল ছেড়ো না৷
ব্যস্ত নাগরিক, জানি তুমি পারবেই৷
ব্যস্ত নাগরিক, একদিন শেষ হবেই৷
সুম্মা আমিন৷
এতদসত্ত্বেও
স্বপ্নক্রয়ে অসমর্থ তরুণ ব্রাত্যজনেরা
মিসকল দিয়ে কাজ সারেন৷
এক বার মিসকল সমান আই মিসিউ৷
দুই বার মিসকল সমান জাতীয় সঙ্গীতের দ্বিতীয় লাইন৷
তিন বার সমান আই নিডিউ৷
স্বপ্নসচিব জেনে যান বিষয়টা৷
ফেডারেশন অব প্রিমিয়াম ড্রিম ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত যুগ্ম-সম্পাদকের অনুযোগ :
বালছাল লোকজনরা খালি মিসকল দেয়৷
তাতে খালি নেটওয়ার্ক জ্যাম হয়৷
তাতে খালি স্বপ্ন ঝিরঝির করে৷
তাতে পরিস্কার দেখা যায় না৷
তাতে তাদের (ত-এর ওপর চন্দ্রবিন্দু বসবে) বেশ সমস্যা হয়৷
বলেন কী!
ইয়া নাফসি!
মাই গুডনেস!
এ তো শুধু সমস্যা না, রীতিমতো প্রবলেম৷
স্বপ্নসচিব চোখেমুখে দুঃস্বপ্ন দেখেন৷
পরদিনই শহরের বিলবোর্ড বদলে যায়৷
আসেন ভাই হাত লাগাই৷
মিসকলকে না বলে দেশ বাঁচাই৷
দেশ বাঁচে না৷
অতঃপর
মন্ত্রিবর্গ দ্বারা আদিষ্ট হয়ে প্রকৌশলীবিদ
দেশজুড়ে রাস্তার ধারে গণস্বপ্নাগার বানান৷
এই প্রথম সম্পূর্ণ দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি৷
এই প্রথম স্বল্পমূল্যে দূষণমুক্ত পরিবেশবান্ধব স্বপ্ন কেনা ও দেখা যাবে৷
লাখ টাকার স্বপ্ন এখন এক টাকা পনেরো পয়সা৷ ভ্যাটসহ৷
শায়খ স্বপ্ন মাত্র দুই টাকা তিরিশ পয়সা৷ ভ্যাটসহ৷
অন্যকে স্বপ্ন দেখানোর স্বপ্ন তিন টাকা পয়তাল্লিশ পয়সা৷ ভ্যাটসহ৷
প্রতি স্বপ্নের সাথে দেশী এনজিও মিনিপ্যাক স্বপ্ন ফ্রি৷
এবং
সবশেষে
জনগণকে মুক্তি দিতে
বামপন্থীরা এগিয়ে এলেন৷
সংগ্রামী সাথীদের লাল সালাম ঠুকে তারা ডাক দেন,
বুর্জোয়া স্বপ্নবাজদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়াতে হবে৷
তথাকথিতবিশ্বায়নবিরোধী প্রতিবাদী স্বপ্ন দেখতে হবে৷
তারা আরো বললেন,
বলার চেষ্টা করলেন,
গণস্বপ্নাগারগুলো আসলে শাসক ও শোষকশ্রেণীর যন্তর-মন্তর ঘর৷
লাভ হলো না৷
ততক্ষণে সবার মগজ-ধোলাই হয়ে গেছে৷
যথারীতি পরের বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী৷
- ইশতিয়াক জিকো, ঢাকা, ২ মার্চ ২০০৬
_________________________
গিমিকাব্য নোট : গিমিকাব্য প্রচলিত অভিধানের বাইরে থেকে আমদানিকৃত শব্দ। 'গিমিক' (gimmick) আর 'কাব্য' এক করলে নামকরণে একটা ভাব আসে৷ কবিতা হয়েছে কি হয়নি, তার কূটতর্ক থেকে আপাত রেহাই পাওয়া যায়৷এ কাব্যে ব্যবহৃত কিছু শব্দের টীকা দিলে ভালো হতো৷ কিন্তু ‘এত-ভালো-দিয়ে-কী-হবে’ মানসিকতা কাজ করায় টীকা সংযুক্ত করা হলো না৷
অলঙ্করণ নোট: ম্যাথেমেটিকা সফটওয়্যার দিয়ে গামা ফাংশনের (ডানে) এই ত্রিমাত্রিক চিত্র আঁকা হয়েছে৷ মাণিক্যচিপায় আটক এই ফাংশনটি বিশুদ্ধ গণিত শিক্ষার্থীদের খুব দংশন করে৷ছবির ঘনাকার বাক্সখানিও (বাঁয়ে) গাণিতিক সমীকরণের অধীনে অঙ্কিত৷ বাকি কাজ ফটোশপের দয়া।
ইন্টারনেট প্রকাশনা নোট : এই গিমিকাব্যের প্রথম প্রকাশ বাঁধ ভাঙার আওয়াজ ব্লগ সাইটে, ২ মার্চ ২০০৬-এ। দ্বিতীয় প্রকাশ এখানে। খানিকটা পরিবর্তিত আকারে।
No comments:
Post a Comment