ফুল ফুটুক আর না ফুটুক, বোমা ফুটবেই
৯ সেপ্টেম্বর ২০০৬
গিমিপাদ্য : লেবাননে বৈঠক শেষে চলে যাই মেক্সিকো। ব্যাটা ফিলিপ কালদেরন লাফাচ্ছে ইদানীং। এদিকে, কয়লাখনির লাশ উদ্ধার শেষ না হতেই মহারাষ্ট্রে বোমা ফোটে, গত মাসে বাগদাদে মারা গেছে ১৫৩৬ জন মানুষ, মানুষ শব্দটায় এসে টেপের ফিতা আটকে যায়, আমি সেসব না দেখার ভান করে মালেগাঁও যাই, ১২৫ জন সারিবদ্ধ হাসপাতালে, খাতায় সই মেরে কফি আনানের মতো হাত নাড়ি, সময় নেই সময় নেই, ভিয়েনায় সন্ধায় মিটিং, ইউরেনিয়াম ডুগডুগি বাজানো বন্ধ করতে ইরানকে নতুন টোপ দিতে হবে, চালু মাল আহমাদিনেজাদ শালা, সোজা আঙুলে লাভ নেই লাভ নেই, ব্লেয়ারাঙ্কেলকে চুপিচুপি দেখাই লেবার পার্টির মূলনীতি। মুখ ফসকে, গলা ছেড়ে বলা যাক এবারঃ হে বিশ্বনেতারূপী অবতারবৃন্দ, কিছু একটা ত্যাগ করুন, পদত্যাগ বা মলমূত্রত্যাগ, কারণ আপনাদের ত্যাগেই মানু মানু মানুষের মুক্তি, জেনারেল পারভেজ আফগানে বাঁশি বাজানোয় মগ্ন ছিল, বেচারা শোনেনি আমার কথা; ক্লান্ত আমি, বৈশ্বিক আমি, বিছানায় শুয়ে পরের দিনের শিডিউল বুনি, বুনতে থাকি, ঠিক আপনার মতো। দেয়ারফোর, আইলাভিউ। (প্রমাণিত)
______________________
১০ সেপ্টেম্বর ২০০৬
নোট: সত্যি বলতে কি, পেশাগত কোনো গোপন মহৎ উদ্দেশ্য ছাড়া, অর্থের কারণে, একটা টেলিভিশনের ইন্টারন্যাশনাল ডেস্কে ইদানীং যাতায়াত আমার। কাজের খাতিরে তাই, অচেতন মন থেকেই যেন চাই, অনেক, অনেক মানুষ মারা যাক। নিউজ অ্যারিথমেটিকের সোজা ফর্মূলা, অনেকে মারা গেলে দর্শকপ্রিয় ব্রেকিং নিউজ, একটা এক্সক্লুসিভ প্যাকেজ আইটেম বানানো যাবে, সহকর্মীর পিঠ চাপড়ানো, সাথে নিউজ এডিটরের পাশবিক হাসির জগাখিচুরি কল্পনা। আমি তখন, কর্পোরেট উত্তেজনায়, নিউজ অ্যাজেন্সির চ্যানেল থেকে চোখ সরাই না। দুর্ঘটনার ওয়েবপেজে গিয়ে বারবার রিফ্রেস বাটন চাপি। মৃতের সংখ্যা, লাশের সংখ্যা কি বাড়লো? মানুষ-মানুষ খেলার স্কোরবোর্ড! মানুষ তখন, সত্যি বলছি, অফিস টাইমে, আমার কাছে, স্রেফ পরিসংখ্যান হয়ে যায়। বাসায় ফিরে বেহুঁশ আমি, অনুভূতিহীন মৃতপ্রায় আমি, কান্নাকাটি করি, হয়তো বা করি না, অথবা করার ভান করি, কুমির-মোরগের মতো।
এ গিমিপাদ্য আমার সেই মৃতপ্রায় আমি’র কাউন্টার চিৎকার। এভাবে মানুষ হবার ইচ্ছা জিইয়ে রাখি। হয়তো ভুল করে একদিন মানুষ হয়ে যাবো। সাধু পাঠক, সাবধান!
______________________
১৩ সেপ্টেম্বর ২০০৬
আপডেট: অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, কাজ করবো না সেখানে। হালকা লাগছে ভেবে। ঐক্যের ভিত্তিতে ফিলিস্তিনি সরকার গঠন হোক। আপাতত আমাকে চোখ-কান পাততে হচ্ছে না হামাস নেতা-মাহমুদ আব্বাসের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে। দামেস্কে বোমা হামলার ইনভিশন লিখতে গিয়ে বিশ্লেষণ করতে হবে না মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতি।
মিডিয়া থেকে প্রসব হতে থাকুক ব্রিটনি স্পিয়ার্সের দ্বিতীয় সন্তান, সাদ্দামের শুনানি, জাপানের গোয়েন্দা স্যাটেলাইট, উত্তর কোরিয়ার পিয়ংইয়ং পরমাণু বোমার পরিকল্পনা, চিলির বিক্ষোভসহ যাবতীয় মুনাফালভ্য দুর্ঘটনা, আর তার বিক্রয়যোগ্য উপস্থাপনা।
করলাম না আপোস কর্পোরেটের সাথে, হলাম না হয় একটু মহান, একটু মানুষ। এত ভয় দেখাচ্ছেন কেন মোড অব প্রোডাকশনের?
______________________
১৫ সেপ্টেম্বর ২০০৬
মন্তব্যকারীদের প্রতি : সান্ত্বনা দেবেন না। প্রশংসা, নান্দীপাঠ চলুক অন্য কোথাও। টেলিভিশন, যদি থাকে, বন্ধ থাকুক। লোডশেডিংয়ের সময় ঘরে ঘরে জাতীয়তাবাদের মোমবাতি জ্বালান। এভাবে ধীরে ধীরে, নিজেকে বিক্রয়যোগ্য, বা বিশ্বাসযোগ্য করে তুলুন আপনার ভালোবাসার মানুষটির কাছে। ক্ষমা করুন।
- ইশতিয়াক জিকো, সেপ্টেম্বর, ঢাকা
No comments:
Post a Comment