Saturday, April 1, 2006

ভাবনার স্প্রে ০০৬

৬. গুরুমারাবিদ্যা শেখা

এত বিভ্রান্তি! উপায় কী, গুরু?

উপায় : গুরুর কাছ থেকে মুক্ত হওয়া। গুরুমারাবিদ্যা শেখা।

মার্ক্স-পরবর্তী আমলের একটি 'জনপ্রিয়' প্রশ্ন দিয়ে শুরু করি। কার্ল মার্ক্স কি নিজে মার্ক্সবাদী ছিলেন সারাজীবন?

উগ্র-বামপন্থীরা লাল শিং উঁচিয়ে তেড়ে আসবেন না। কোন অর্থে বলছি, খুঁজতে প্রশ্নটা টেনে সময়ের ঘড়ি উল্টোদিকে ঘুরান। হেগেলের সময়ে গিয়ে থামুন। দার্শনিক হেগেলকে শ্রদ্ধা করি আমি। তাঁর সময়ের একজন আদর্শ শিক্ষক ছিলেন তিনি। কারণ, তিনি গুরুমারাবিদ্যা কী তা শিখিয়ে গেছেন। দেখুন, তাঁর দর্শনে 'দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া'র ব্যাখ্যায় অণুপ্রাণিত হন কিয়ের্কেগার্ড আর মার্ক্স। তারপর দু জনই হেগেলের ভাববাদকে হেগেল-দর্শনের কাঠগড়ায় দাঁড় করালেন। সেখান থেকে একদিকে পেলাম ধর্মীয় অস্তিত্ববাদ, অন্যদিকে দ্বান্দ্বিক বস্তুবাদ। জ্যঁ পল সার্ত্রে এসে আবার গুরুমারাবিদ্যা প্রয়োগ করলেন। ছেড়ে দিলেন না আগের মতবাদকে। কিয়ের্কেগার্ডের অস্তিত্ববাদে যে ধর্মগন্ধ ছিল, তাকে আবার অস্তিত্ববাদের কাঠগড়ায় তুললেন। এভাবে দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়া চলছে। অনেক আগে থেকেই। এখনও।তবে সেটা কীভাবে চলছে, তার ইতিহাসটা আমাদের জানতে হবে। এ গুরুমারাবিদ্যা যত শিখতে পারবো, ততই বিভ্রান্তির ফাঁদগুলো স্পষ্ট হবে।

গুরুমারাবিদ্যা শেখার প্রথম উপায় হলো প্রশ্ন করা। দ্বান্দ্বিক উপায়ে প্রশ্ন করা।

সমাজ পরিবর্তন (বা রূপান্তর) হচ্ছে কেন? পরিবর্তনটা কোনমুখী সে কথায় আসা যাবে, কিন্তু তার আগে, কেন হচ্ছে পরিবর্তন? অনুচ্ছেদের ঠিক এ জায়গায় এই প্রশ্ন জানতে চাইলে উত্তর পাবেন : গুরুমারাবিদ্যা জানা কিছু লোক প্রশ্ন করছেন বলে। কেউ না কেউ প্রশ্ন করছেনই। দ্বান্দ্বিক প্রক্রিয়ায় প্রশ্ন-উত্তর চলছে।

তা গুরুমারাবিদ্যা কীভাবে শিখবো? এক গুরুর লেকচার শুনে আর এক লেখকের বইপত্তর পড়ে কি গুরুমারাবিদ্যা শেখা যায়?

গুরুমারা প্রশ্নও আছে। কেমন করে 'প্রশ্ন' করতে হয়? প্রশ্ন করবো কেন? অথবা একজন গুরু কেন গুরুমারাবিদ্যা শেখাতে চান? গুরুমারাবিদ্যা কি গুরুবাদকেই নাকচ করে না?

ভাবনার স্প্রে চলছে...

মার্ক্স মার্ক্সবাদী ছিলেন কিনা সে প্রশ্ন করেছিলাম। একই রকম প্রশ্ন ঢালতে পারি নিজ নিজ প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের কড়াইয়ে। যিশু খ্রিস্টান ছিলেন কিনা অথবা মুহম্মদ মুসলমান ছিলেন কিনা...

প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মকেন্দ্রিক প্রতিষ্ঠান, বা আমাদের 'আলোচ্য অংশের মাদ্রাসা' কি গুরুমারাবিদ্যা শেখাতে পারে?

এ বিচারে আরেকটি উল্লেখযোগ্য প্রশ্ন করতে পারেন। আমি, মানে এক্ষেত্রে ইশতিয়াক জিকো কি সন্দেহের উর্দ্ধে? ভাবনার নামে বিভ্রান্তির স্প্রে ছিটাচ্ছি না তো? অথবা গিমিক বা স্টান্টবাজি? অবান্তর নয় প্রশ্নগুলো। প্রয়োজন আছে। একজন মানুষ 'সৎ' না 'অসৎ', তা যাচাই করার জন্যও গুরুমারাবিদ্যা কাজে লাগে।

তাহলে সরদার ফজলুল করিম বলুন, সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলুন, বদরুদ্দীন উমর, হুমায়ূন আজাদ, আনু মুহম্মদ, আবদুল্লাহ আবু সায়ীদ বলুন, অথবা, অথবা আমাদের 'আলোচ্য ফরহাদ মজহার'-ই বলুন, স্টাডি করে কেউ এমনটা বলতে পারেন, আমাদের সময়ে তাঁরা 'গুরুমারাবিদ্যা কী' তা শিখিয়ে গেছেন, যাচ্ছেন। অথবা এটা বলা হয়তো আরো যুক্তিসংগত : তাদের কাছ থেকে আমরা গুরুমারাবিদ্যা কী তা শিখে নিতে পারি।

কিন্তু শিখবো কীভাবে? বিজ্ঞাপনের আড়ালে বাস্তবরাজ্য যে বড়ই বাস্তব! গুরুমারাবিদ্যা শেখার জন্য প্রশ্ন করতে হয়। নতুন নতুন প্রশ্ন করতে হলে জানার পদ্ধতিটা জানতে হয়। আমাদের যে অতো সময় নেই, গুরু! কোন সময়ে কোন রিংটোন ডাউনলোড করবো, তার হিসাবনিকাশ করতেই জীবনটা তেজপাতা হয়ে যায়!

'উ' নামে বিশ্বসাহিত্যকেন্দ্রগামী এক পরিচিতজনের সাথে আলাপ করছিলাম। কথাপ্রসঙ্গে বললেন, সায়ীদ স্যার কেমন যেন বদলে গেছেন। এতদিন 'আলোকিত মানুষ'-এর কথা বলতেন, এনজিও'র খপ্পরে পড়ে এখন বাপা আর 'বইয়ের আলোকিত গাড়ি'র কথা ভাবেন। সারাদিন কিছু 'উপমন্ত্রী'বেষ্টিত থাকেন বলে তাকে কিছু বলাও যায় না।

'উ'-কে ধন্যবাদ দিই। তিনি গুরুমারাবিদ্যা শিখছেন।

ধন্যবাদ সায়ীদ স্যারকেও। আলোকিত কিছু মানুষ নিশ্চয়ই তৈরি করেছেন তিনি। তাই তাঁর 'আলোকিত-ইজম' আর তার ফলাফলকেও প্রশ্নের বাইরে রাখছি না আমরা।

টিকে থাকার লড়াইটা সত্যিই বৈচিত্র্যময়।

যারা হোমওয়ার্ক পছন্দ করেন : প্রশ্ন করা মানেই কি বিভ্রান্ত হয়ে যাওয়া? আর শুধু সংশয়বাদীরাই কি প্রশ্ন করেন?

[- পরবর্তী কিস্তি : ভাবনার স্প্রে ০০৭ -]

1 comment:

Anonymous said...

Dear Ziko Bhai,
I am agreed with your concept of "Guru Mara Vidya". But if you describe in detail to general people about the scientific methodology of knowing or doing something, it may be better. when will you post spray 007?

RUPOM

Post a Comment