Saturday, April 1, 2006

ভাবনার স্প্রে ০০৭

৭.

দর্শনচর্চায় আমি অস্তিত্ববাদকে পাশে রাখি। সার্ত্রের মন্তব্য গুরুত্বপূর্ণ লাগে : অস্তিত্ববাদী প্রশ্নগুলোর কোনো চূড়ান্ত উত্তর দেয়া যায় না। দয়া করে কেউ সার্ত্রের মন্তব্য আমার ব্লগে খুঁজতে যাবেন না। এ ব্লগ খোলার 25 বছর আগে তিনি মারা যান।

(আপনারা জানেন, দর্শনের শপিং মল আর কাচাবাজারও তৈরি হয়েছে। সে জায়গা সয়লাব বিকল্প সব প্রস্তাবে। 'পপুলার দর্শন' আর 'সানগ্লাসওলা অধিবিদ্যা'র জগাখিচুরি! )

'জানি-না বুঝি-না' বলে যেমন বড়াই করা যায়, তেমনি 'এই-দেখুন-আমি-জানি-আর-আপনি-জানেন-না' বলে ইশতিয়াকীয় ভাব নেয়া যায়। দুয়ের সাথেই লোকে পরিচিত। তাই বলে ঝট করে কাউকে মরমীবাদের বাজারে, প্রাতিষ্ঠানিক ধর্মের মাজারে বা মজহারীয় মসজিদে ছুড়ে ফেলাকে সমর্থন করি না।

লেখালেখিতে মুক্তচিন্তার চর্চা করতে গিয়ে 'বদ্ধচিন্তা' করার পথ আটকে দেয়া কি পরষ্পর-বিরোধিতা না? পাঠক শেষে কোনটা গ্রহণ করবেন, এ সিদ্ধান্ত কি লেখক বলে দেন? পাঠকমাত্রই লেখকের চেয়ে বুদ্ধিবৃত্তিক দিক দিয়ে নিচু স্তরে থাকেন-- এ ভাবনা কি অহমযুক্ত না?

অন্য দোকানের পচা আপেল খেয়ে আমার দোকানের ভালো আপেলটি যদি কেউ না খান, তাহলে সে সমস্যা আমারও। কীভাবে?

'ফরহাদ মজহার-এর মতো বাম পচে গেলে দুর্গন্ধ ছড়ায়'--এ কথা বলছিলেন না? পচে যাওয়া আপেলটাই কেন মানুষ খাচ্ছে? কারণ যিনি পচা আপেল সাজিয়ে বসে আছেন, তার কৌশলটা 'যৌক্তিক'। (যৌক্তিক না লিখে 'যৌক্তিক' লিখেছি)

যুক্তির মারপ্যাঁচ বোঝা আর তা প্রয়োগ করতে না পারায় যে গরমিল, তা দর্শনগত। বাক্যটি আরেকটু এগিয়ে নিয়ে যান। 'পচা' আর 'ভালো' যখন একই শব্দ-বাক্য-ভাষা ব্যবহার করে, তখন টিকে থাকার লড়াইয়ে কৌশলটা পাল্টে নিতে হয়। প্রগতিশীলতা, মুক্তচিন্তার মতো শব্দ কেবল বাতাসেই ভেসে বেড়ায়, মাথায় আঘাত করে না। আমরা তাই পার্থক্য করতে পারি না কোনটা ভদ্রতা আর কোনটা ভণ্ডামি।

'অসৎ'-রা যদি 'আপডেটেড কৌশল' ব্যবহার করে, আপনারা 'সৎ'-রা কেন পুরনো কৌশল নিয়ে অভিমান করবেন? এভাবে 'সৎ' টিকে থাকতে পারবে?

'যা টিকে যাওয়ার ক্ষমতা রাখে, তাই যৌক্তিক'। হেগেল!

প্রশ্ন করছেন তো? অর্থনৈতিক ক্ষমতাবলে টিকে যাচ্ছে আমেরিকা। তার মানে কি আমেরিকাই যৌক্তিক? হোমওয়ার্ক!

[- পরবর্তী কিস্তি : ভাবনার স্প্রে ০০৮ -]

No comments:

Post a Comment