Sunday, June 29, 2008

গল্প : দল বেঁধে যেভাবে হত্যা করি

একদিন বলাকায় দল বেঁধে সিনেমা দেখতে গিয়ে রিয়াদ, আমাদের মাঝে যে কনিষ্ঠ, ভালোবেসে ফেলে সিনেমাকে। এবং বিরতির সময়ে রিয়াদ, যার কণ্ঠস্বর শুনতে আমাদের সবাইকে কথা বন্ধ করতে হয়, জানায় যে সে সিনেমাকে স্পর্শ করতে চায়। যাকে ভালোবাসা যায়, তাকে স্পর্শ করার এ অধিকার জন্মানো স্বাভাবিক ভেবে আমরা রিয়াদের চাওয়াকে তখনই ফেলতে পারিনি।

এবং এও সত্যি হতে পারে যে ততদিনে আমাদের সবার শিমুল মুস্তাফার কণ্ঠে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর অমলকান্তি শোনা হয়ে গিয়েছে, এবং শুনে শুনে আমরা মনে এই ধারণার জন্ম দিয়েছি যে বন্ধুদের এমন অনেক চাওয়াই স্বাভাবিক, যেমন অমলকান্তির রোদ্দুর হতে চাওয়া, এবং তা নিয়ে হাসাহাসি না করে আমাদের উচিত বন্ধুর চাওয়াকে আরো বোঝা। তবে আমাদের ভয় হয় যে অমলকান্তির পরিণতি রিয়াদের, যে অত্যন্ত লাজুক কণ্ঠে আমাদের জানিয়েছিল সিনেমাকে স্পর্শ করার কথা, জানা ছিল কিনা।

আমাদের এমন অনেক ইচ্ছা উদয় হয় এবং মিলিয়ে যায়, আমরা তা গোপন করে রাখি, কিন্তু রিয়াদ ইচ্ছা গোপন করতে পারেনি বলে আমাদের রাগ হতে থাকে। তবে অমলকান্তি কবিতা পড়া থাকায় আমরা সে রাগ গোপন করে রিয়াদকে সিনেমা স্পর্শ করার ব্যাপারে সাহায্য করবো বলে একমত হই এবং একটি সভা ডাকি। আমাদের ভেতর মুনিয়া সিনেমা সম্পর্কে বেশি খবর রাখত বলে তাকে দায়িত্ব দিই সভা চালানোর এবং রিয়াদের চাওয়ার ব্যাপারে আমাদের কী করণীয় থাকতে পারে তা ঠিক করতে।

মুনিয়া অনেক রেফারেন্স ঘেঁটে আমাদের জানায়, দেখা-শোনার পাশাপাশি সিনেমা অনুভব করা যায় মাত্র। একে ধরা বা স্পর্শ করা যায় না। প্রক্ষেপক থেকে আলো এসে পড়ে রুপালি যে পর্দায়, সে পর্দা স্পর্শ করা যায় বড়জোর, তবে মুনিয়া এও মনে করিয়ে দিতে ভোলে না যে পর্দা শুধুই পর্দা, যেমন প্রক্ষেপক শুধু প্রক্ষেপক এবং এর কোনোটিই সিনেমা নয়। মুনিয়ার ওপর আমাদের অগাধ বিশ্বাস থাকায় আমরা রিয়াদের অনুপস্থিতিতে এই সিদ্ধান্তে আসি যে সিনেমা পর্দা বা প্রক্ষেপক নয় এবং যা অনুভব করা যায়, তা স্পর্শ করা যায় না।

এই সিদ্ধান্ত স্থির রেখে আমরা ক্রমাগত সভা করে যাই এবং নতুন কোনো কবিতার এমপিথ্রি পেলে পেনড্রাইভে ঢুকিয়ে বাড়ি ফিরি।
_____________________________
- ইশতিয়াক জিকো / ২৯ জুন ২০০৮, ঢাকা

No comments:

Post a Comment