Monday, February 4, 2008

ইউনিকোড পাঠ ০৩

তৃতীয় কিস্তি পড়ার আগে বলে রাখি, ইউনিকোড দিয়ে ঢাকার বন্যা ঠেকানো যাবে না। আর সুইডেনের চলচ্চিত্রকার ইঙ্গমার বার্গম্যান (সুইস উচ্চারণটা বারিমান) যে মারা গেলেন, তার জন্য ইউনিকোড দায়ী নয়।

হ্যাঁ, এবার পড়া যাক তৃতীয় কিস্তি। তবে খাপছাড়া লাগবে আগের কিস্তিগুলো না পড়লে। অবশ্য সব কিস্তি পড়েও খাপছাড়া লাগতে পারে। পারে বলছি কেন? লাগতে বাধ্য। বাক্যমালাকে কত কাঠখড় পুড়িয়ে যে খাপছাড়া করেছি।
______________________________________
তিন.
অনেকে মনে করেন, ইউনিকোড হলো বিভিন্ন ভাষার অসংখ্য হরফের বিশাল তালিকা। ধারণাটি পুরোপুরি সত্যি নয়। ভুল ধারণা হবার কারণ, ইউনিকোড ক্যারেক্টার সেটের প্রথম ২৫৬টি বর্ণ নেয়া ল্যাটিন-১ ক্যারেক্টার সেট থেকে। আবার ল্যাটিন-১ এর ভেতর ঢুকে গেছে অ্যাসকি কোড। তাই ইউনিকোডকে অ্যাসকি স্ট্যান্ডার্ডের স্রেফ বর্ধিত সংস্করণ ভেবে বসেন।

আরেকটি ধারণা, ইউনিকোড বুঝি ভাষা নিয়ে কাজ করে। না, ঠিক করে বললে, ইউনিকোড কাজ করে ভাষার লিখিত রূপ বা লিপি নিয়ে। আর লিপি মানে তো শুধু স্বরর্বণ-ব্যঞ্জনবর্ণ নয়। বর্ণ ছাড়াও প্রত্যেকটি লিপির থাকে নিজস্ব বিরাম চিহ্ন, বৈশিষ্ট্যসূচক চিহ্ন, গাণিতিক চিহ্ন, কারিগরি চিহ্ন, তীর চিহ্ন, ডিংগব্যাটস। সেগুলোও ইউনিকোডে তালিকাভুক্ত হয়। তালিকার পাশপাশি এটি বর্ণগুলোর প্রকৃতি, আচরণ, মাত্রার ব্যবহার, ব্যাকরণগত প্রয়োগ, সেইসাথে সর্টিংয়ের বিষয়টিও বিবেচনা করে। কত কাজ করে রে ইউনিকোড!

বাংলা, ইংরেজিসহ আধুনিক সব ভাষার লিখিত রূপই ইউনিকোড স্ট্যান্ডার্ডের অন্তর্ভুক্ত। পাশাপাশি এটি অনেক প্রাচীন ভাষার লিপিও সাপোর্ট করে। এখনও আরও লিপি ঢুকছে, এবং আরও লিপি লাইনে দাঁড়িয়ে আছে পরের সংস্করণগুলোতে অন্তর্ভুক্ত হবার আশায়।

ইউনিকোডের নীতিমালায় বলা আছে, একবার কোনো লিপি অন্তর্ভুক্ত হলে তা বাদ দেয়া বা নতুন করে এনকোডিং করা যায় না। কোনো বর্ণ প্রথম সংস্করণে যেভাবে অনূদিত হয়, পরের সংস্করণগুলোতেও সেভাবে অনূদিত হবে। তাই ইউনিকোড একটি স্থায়ী স্ট্যান্ডার্ড এবং এর সংস্করণগুলো একটি অন্যটির সঙ্গে কম্পাটিবল। বিশ্বের প্রায় সব কোম্পানি এখন এ স্ট্যান্ডার্ডকে মেনে নিয়ে তাদের অ্যাপ্লিকেশন বানাচ্ছে। যেসব অপারেটিং সিস্টেম বা অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যারে এখনও ইউনিকোড সাপোর্ট নেই, তারাও তা শিগগিরই আপডেট করছে।
______________________________________
পরের কিস্তি আগামীকাল।

যাওয়ার আগে খুচরো ভাবনা : এত চিহ্ন ইউনিকোডের তালিকায়, ইমোটিকনও কি আছে তাতে? এটাও তো আবেগী ভাষার লিখিত রূপ। ম্যাসেঞ্জার খুললেই দেখা যায় এক ঝাঁক ইমোটিকন, একেকটা আইকন একেক রকম আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করে। সত্যিই প্রকাশ করতে পারছে তো মানুষের আবেগ, অনুভূতি? নাকি সাইবার রাজ্যে ইমোটিকন দিয়ে আরও আড়াল করে ফেলছি আমাদের ভেতরকার অনুভূতিগুলো?

No comments:

Post a Comment