দেখা সিনেমা : ব্যাবেল, নিশিযাপন, বিবর, কাঁটাতার, উৎসব
১.
বাজেট যাই হোক না কেন, ট্রাইপডে না রেখে, ক্রেনে-ট্রলিতে না বসিয়ে, শুধু হাতে ক্যামেরা নিয়ে শুট করা বোধহয় এখনকার সিনেমায় একটা চল হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাবেল সিনেমা দেখে এ কথা আরেকবার মনে হলো। পরিচালক মেক্সিকোর আলেহান্দ্রো গনসালেস ইনারিতু। তার ডেথ ট্রিলজির শেষ পর্ব এই ব্যাবেল। কান ফেস্টিভালে পুরস্কার জুটে গেছে এর মধ্যে। সাতটি মনোনয়ন পেয়েছে এবারের অস্কারে, জিতেছে একটি, আবহ সঙ্গীতের জন্য। দুই ঘন্টা তেইশ মিনিট, ২৫ মিলিয়ন ডলার বাজেট, ব্র্যাড পিট-গার্সিয়া বার্নেল-কোজি ইয়াকুশের মতো চড়া সম্মানীর অভিনেতা, সব মিলিয়ে ব্যাপক প্রচারণা ছিল সিনেমাটা নিয়ে। মাল্টি-ন্যারেটিভ গাঁথুনি। মেক্সিকো, আমেরিকা, জাপান, মরক্কোর চার বিচ্ছিন্ন ঘটনা একটা আরেকটার সঙ্গে জড়িয়ে গেছে। তবে জাপানের অংশটুকু মূল কাহিনীর সঙ্গে যায়নি মনে হলো।
ডেথ ট্রিলজির মধ্যে প্রথম ছবিটা মনে গেঁথে আছে। আমোরেস পের্রোস। এই ছবি বানানোর পর ইনডিওয়্যার ডট কমে ছাপা একটা সাক্ষাৎকার, ইনারিতুর।
২.
নিশিযাপন সিনেমা দেখলাম, কোনো এক নিশিতে। সত্যজিতের ছেলে সন্দীপ রায়ের পরিচালনা, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়ের গল্প অবলম্বনে। প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর, সংকটকালে, আপন মানুষ বদলে যায়। ভেতরের চাপা ক্ষোভ, স্বার্থপর রূপ বেরিয়ে আসতে থাকে। ক্যানিবালিজম (স্বজাতি ভক্ষণ, খিদের চোটে মানুষে মানুষ খায়) দেখায়নি অবশ্য, মূল গল্পে ছিল।
সন্দীপ রায় এ ছবি নিয়ে বলেছেন দ্য টেলিগ্রাফ পত্রিকায়। আরেকটা রিভিউ পড়ছিলাম নিশিযাপন সিনেমা নিয়ে।
৩.
একই ডিভিডিতে ছিল বিবর। বিবর মানে গর্ত, এখানে হয়তো ফাঁদ অর্থে। সমরেশের উপন্যাস অবলম্বনে। অভিনয় মনে ধরেনি, গানটা আরোপিত, কিছু ক্ষেত্রে সংলাপে জোর করে সোশ্যাল মেসেজ আনার চেষ্টা। কাহিনী বলার ঢংটা ইন্টারেস্টিং। মধ্যবিত্ত অফিস কর্মকর্তা বিরেশ। আগে পার্টি করতো, বাম আদর্শ ছিল। এখন অফিস শেষে বারে গিয়ে মদ আর মেয়ে।
ঘটনাক্রমে পরিচয়, এবং ভালোবাসা, নীতা রায়ের সাথে। দেহজীবিনী হলেও বিরেশের বেলায় ঘণ্টাপ্রতি দেড় হাজার টাকার হিসেব করে না নীতা। অবশ্য এটা ভালোবাসা কিনা, নিশ্চিত নয় বিরেশ।
একটা জায়গায়, নীতা রায়ের সংলাপে ভিন্ন জীবনদর্শন উঠে আসে। নীতা স্বেচ্ছায় এ পেশা বেছে নিয়েছে। এখন সে স্বাবলম্বী, স্বাধীন। পেশার কৌলিনত্ব নিয়ে মধ্যবিত্ত টানাপোড়েন নেই নীতার। পেশাদারিত্বের খাতিরে ক্লায়েন্টকে সে দেহ দেয়। তার বাইরে দেহ দেয় বিরেশকে, ব্যক্তিগত জীবনে। দুই দেয়ার দুই রকম অর্থ নীতার কাছে। কিন্তু ভালোবাসার মানুষ আর তার সমান্তরালে শরীর বিক্রি মেনে নিতে কষ্ট হয় বিরেশের, উদার-বামপন্থী হলেও। ক্লাইমেক্সে আসে ঘটনা যখন বিরেশ জানতে পারে নীতার ক্লায়েন্ট এক প্রভাবশালী বিদেশফেরত, যার জন্য বিরেশের চাকরি যায়-যায় অবস্থা। বিরেশ ঠাণ্ডা মাথায় খুন করে নীতাকে। খুনের তদন্ত করতে ডিডেকটিভ আসে। তারপর ব্লাহ ব্লাহ।
পরিচালক সুব্রত সেন এর আগেও খোলামেলা যৌনদৃশ্য রেখেছেন ছবিতে। তার একটা সাক্ষাৎকার পড়েছি টেলিগ্রাফ পত্রিকায়।
৪.
বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিনেমা কাঁটাতার-এর কাহিনী দুই বাংলার সীমান্তে এক মেয়েকে নিয়ে। সুধা বা রাহেলা খাতুন বা পিরানী। বাঁচার তাগিদে কখনও নাম পাল্টায়, কখনও ধর্ম। গল্পের গাঁথুনি ঢিলে, সিকোয়েন্সের খাঁজে ঢেলে দেয়া বাণিজ্যিক মশলা। তবে সিনেমাটোগ্রাফি ভালো লেগেছে, বিশেষ করে লং শট। শব্দমিশ্রণও মনে ধরেছে।
লিংক:
# শ্যাজার ব্লগে কাঁটাতার রিভিউ।
# ওয়েবদুনিয়া ডট কমে কাঁটাতার।
৫.
উৎসব দেখলাম। ঋতুপর্ণ ঘোষের। ছবিটি মুক্তি পায় ২০০০-এ। সত্যজিতের শাখাপ্রশাখা বা অরণ্যের দিনরাত্রির পরিবারকেন্দ্রিক আবহ আছে ছবিতে। এখানে মূল চরিত্র একজন নয়, একটা একান্নবর্তী পরিবার। দুর্গাপূজা পালন করতে ছেলেমেয়েনাতিনাতনিসহ সবাই আসে পুরোনো বাড়িতে, দিদিমার সঙ্গে কটা দিন একসঙ্গে হইচই হবে। পরিবারের সদস্যদের মাঝে যে সম্পর্ক, চির ধরে তাতে, জোড় লাগানোর, টিকিয়ে রাখার চেষ্টা চলে। ভাঙা-গড়ার চক্র। ধীর লয়ে গল্প এগুতে থাকে, ধীর লয়েই শেষ হয়। শব্দযোজন আর আবহ সঙ্গীত ভালো লেগেছে। রবীন্দ্রনাথের গান 'অমল ধবল পালে লেগেছে' ব্যবহার হয়েছে, খালি গলায়, মাথায় ঘুরছে সেটা এখনও।
উৎসব সিনেমা নিয়ে এদিক সেদিক:
No comments:
Post a Comment